যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, গোত্র মানতে হয় কেন?
তার উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, “প্রতিটি গোত্রই স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্যে বিশেষ। এক-একটি গোত্র তার Culture, Creed, Character, Conduct (সংস্কৃতি, ধর্মবিশ্বাস, চরিত্র, আচরণ) বহুযুগ ধ’রে নানাভাবে Achieve (অধিগত) করেছে। এই গোত্রধারা কখনও নষ্ট করতে নেই। গোত্র ভাঙ্গলে সৰ্ব্বনাশ। সেইজন্য ভিন্ন গোত্র দেখে বিয়ে দিতে হয়। বিভিন্ন গোত্রের Male and Female-এর (স্ত্রী ও পুরুষের) যখন Proper Combination (উপযুক্ত মিলন) হয় তখন গোত্র ও বংশের গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলি সন্তান-সন্ততির মধ্যে Dominant (প্রধান) হয়ে ওঠে। আর, Combination (মিলন) ঠিকমত না’ হলেই ওগুলি Recessive (হ্রাসমুখী) হয়ে ওঠে। সেইজন্য সদৃশ বংশে বিয়ে হওয়া ভাল। সেটা হ’ল First Class Marriage (প্রথম শ্রেণীর বিবাহ)। আর, অনুলোম হ’ল Second Class Marriage (দ্বিতীয় শ্রেণীর বিবাহ)। অনুলোম বিবাহের ক্ষেত্রেও ঐ ভিন্ন গোত্র-প্রবর এসব ঠিক রেখে করবে। কিন্তু প্রতিলোম যেন কখনও না হয়। তোমার একটা মেয়েকে যদি কায়স্থ বা বৈশ্যের সাথে বিয়ে দাও তাহ’লে কিন্তু একেবারে সব Murder (নিকেশ)। কারণ, ওর ফলে সব গুণগুলি Recessive (হ্রাসমুখী) হ’য়ে যায়।
দীপ রক্ষী, ৫ তাং - ১৪.৮.১৯৫৯ ইং
গত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে লিখেছিলাম “বাঙ্গালী হিন্দুদের জাতিভেদ ও পদবী সমূহ” তারই ধারাবাহিক হিসাবে আজ “গোত্র” বিষয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা মত আমাদের নিজ গোত্র জানা ও তা মানা কতটা জরুরী ও প্রয়জনীয়।
সাধারন ভাষায় বলতে গেলো গোত্র শব্দের অর্থ বংশ বা গোষ্ঠীকে বোঝায়। সনাতন ধর্মে গোত্র মানে একই পিতার ঔরসজাত সন্তান-সন্ততিদের দ্বারা সৃষ্ট বংশ পরম্পরা। কিন্তু গোত্র দ্বারা কখনো কখনো অঞ্চল এবং বিশেষ চিহ্নও নির্দেশ করতে দেখা যায়। বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে, একটি বংশের রক্ত প্রবাহিত হয় তাদের পুরুষ পরম্পরায়। সূতরাং, বংশের রক্তের ধারক ও বাহক হলো পুরুষ। সনাতন ধর্মের বংশ রক্ষার ধারায় ছিলেন প্রথম সত্য যুগের শুরুতে ব্রহ্মার মানস সন্তানদের মধ্যে অন্যতম ঋষিগণ। পরবর্তীতে অন্যান্য ঋষির বংশ পরম্পরাও পরিলক্ষত হয়।
এই একেকজন ঋষির বংশ পরম্পরা তাদের নামে এক একটি গোত্র হিসেবে পরিচিত লাভ করে। সে হিসেবে একই গোত্রের বংশীয়গণ পরস্পর ভাইবোন। এমনকি একই বংশের স্বজনেরা পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে, সাধন-ভজন, পরমেশ্বর ভগবানের বাণী প্রচারের প্রয়োজনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লে পিতার নামের সাথে গোত্র নামের গুরুত্ব প্রকাশ পায়। যেমন- কাশ্যপ মুনির বংশধরেরা নিজেদের “কাশ্যপ গোত্রস্য” বা কাশ্যপ মুনির বংশ পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এভাবে পর্যায়ক্রমে আরো অনেক গোত্রের নাম পাওয়া যায়। সনাতন ধর্মে প্রকট আছে বা অহরহ যেসব গোত্র দেখা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো। একই গোত্রের লোকজনকে সমগোত্রীয় বলা হয়। সোজা কথা এরা পরস্পর নিকট-আত্মীয়। আর অন্যান্য গোত্রের লোকজনের সাথে তারা পরস্পর আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ এই কারণে যে, আমরা সবাই প্রপিতামহ ব্রহ্মা থেকে এসেছি যদিও আমাদের আদি পিতা-মাতা যথাক্রমে মনু ও শতরূপা।
সমগোত্র মানে একই পিতৃবংশ। যেমন কাশ্যপ গোত্র। মুনি কশ্যপ ঋষির বংশধর। ব্রহ্মার মানস পুত্রগণের থেকে আগত প্রতিটি বংশ এক একটি গোত্র বা রক্তের ধারায় প্রবাহিত। একই গোত্র চারটি বর্ণে থাকতেও দেখা যায়। কারণ, একই ঋষির সন্তানরা একেক সময়ে একেক কাজে মনোযোগী হয়ে থাকে। যে শাস্ত্র অধ্যয়ণ বা বুদ্ধিভিত্তিক (আধুনিক সমাজে যাকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়) জীবিকা অবলম্বন করে সে ব্রাহ্মণ হিসেবে, রাজধর্ম পালনকারী ক্ষত্রিয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগী হলে সে বৈশ্য আর এসব পেশাগত লোকদের সেবা করেই সন্তুষ্ট অর্জনে আগ্রহীরা শূদ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে থাকে। এ গুণাবলীসমূহ কেউ জন্মে প্রাপ্ত হয় না, অর্জন করতে হয়। তাই বর্নাশ্রম সঠিক কিন্তু বর্ণপ্রথা ভুল ও মিথ্যা যা ক্ষত্রিয় ধর্ম পালনে পুরোপুরি অপারগ রাজা বল্লাল সেন তার রাজ-অপকর্ম ঢাকতে শুরু করেছেন। ধার্মিক ও পন্ডিতদের অত্যাচার করে রাজ্য থেকে বিতারিত করে। আর এটা পুরোপুরি কার্যকর করেছেন তারই পুত্র রাজা লক্ষ্মণ সেন।
সনাতন ধর্মে নিকটাত্মীয় বা সমগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। কারণ হিসেবে বৈদিক শাস্ত্রসমূহ বিশেষ করে মনুসংহিতায় বলা হচ্ছে, একই রক্তের সম্পর্কের কারো সাথে বিবাহ হলে সন্তান বিকলাঙ্গ, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, মেধা ও বুদ্ধিহীন হয়। শিশু নানা রোগে জরাজীর্ণ হয়ে থাকে। তবে একান্তই প্রয়োজন হলে/ পাত্র-পাত্রী না পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ১৪ পুরুষ পেরিয়ে গেলে তখন বিবাহ করা যেতে পারে। তবে তা যথাসম্ভব এড়িয়ে চললেই ভালো।
বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানও এটি স্বীকার করেছে। তারা বলছেন, নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। “The Lancet” (দ্য ল্যানসেট) সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। “First cousin marriage doubles risk of birth defects in children”। বিস্তারিত
সনাতন ধর্মের প্রচলিত কিছু গোত্র ও বিস্তারিত। যারা যেই ঋষির বংশধর তারাই সেই গোত্র।
· অগস্ত্যঃ- দেবতা মিত্রবরুণ ঔরসে ও উর্বশীর গর্ভে অগ্যস্ত ঋষির জন্ম। পুরানমতে অগ্যস্ত ঋষি একবার সমুদ্রপান করেছিলেন। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র বনবাস কালে অগ্যস্ত ঋষির আশ্রমে থেকে অক্ষয়তূণীরদ্বয়, বৈষ্ণবধনু ও মহাস্ত্র প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- জৈমিনী ও দধিচী।
· অত্রিঃ- অত্রি ঋষি ছিলেন ব্রহ্মার মানস পুত্র ও সপ্তঋষির অন্যতম। ঋষি অত্রি ও মাতা অনুসূয়ার পুত্রদয় হলেন, মহর্ষি দুর্বাসা, সোম ও ভগবান দত্তাত্রেয় ত্রিনাথ। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- আত্রেয় ও শাতাতপ।
· আত্রঃ- আত্র ঋষির বংশধরা ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদের বহু ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিলেন। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- শাতাতপ ও শাঙখ্য।
· আলিমান / আলম্ব্যায়নঃ- আলম্যান ঋষি ছিলেন একজন বৈদিক ঋষি। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- শাঙ্কায়ন ও শাক্টায়ণ।
· আঙ্গিরসঃ- ঋষি আঙ্গিরস ছিলেন সপ্তঋষির একজন ঋষি অঙ্গিরার পুত্র। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- বশিষ্ঠ ও বার্হস্পত্য।
· কাণ্বঃ- কাণ্ব ঋষি ছিলেন পুরুবংশীয় প্রতিরথের পুত্র। তারই পুত্র মেধাতিথি ঋগবেদ গ্রন্থ প্রণয়ন করে ব্রাহ্মনত্ব লাভ করেছিলেন। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- অশ্বথ ও দেবল।
· কাত্যায়নী / কাত্যায়ণঃ- ঋষি কাত্যায়ণের বংশধরদের বলা হয় কাত্যায়ণ গোত্র। রামায়নে কাত্যায়ণ ঋষির বর্ননা পাওয়া যায়। তিনি বেদের অনুক্রমকার রচয়িতা ছিলেন। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- অত্রি, ভৃগু ও বশিষ্ঠ।
· কাশ্যপঃ- ব্রহ্মা পুত্র মরিচী ঔরসে ও মাতা কলার গর্ভে জন্মগ্রহন করেন ঋষি কাশ্যপ। কাশ্যপ ঋষি দক্ষ প্রজাপতির ১৩ কন্যা বিবাহ করেন। তিনি ছিলেন দেবদৈবত্যাদির জন্মদাতা। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- অপ্সার ও নৈধ্রুব।
· কুশিকঃ- কুশিক ঋষি ছিলেন সোমবংশীয় নরপতি কুশের অন্যতম পুত্র। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- কৌশিক ও বিশ্বামিত্র।
· কৌন্তল্যঃ- স্কন্দপুরানে কৌন্তল্য ঋষির বর্ণনা পাওয়া যায়। ঋষি কৌন্তল্য বংশধরদের কৌন্ডল্য গোত্র বলা হয়। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- স্তিমিক ও কৌৎস্য।
· কৌশিকঃ- রামায়নে এই ঋষির উল্লেখ পাওয়া যায়। কৌশিক ঋষির বংশধররাই এই গোত্র বলা হয়। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- অত্রি ও জামদগ্ন্য।
· কৃষ্ণাত্রেয়ঃ- হরিবংশ পুরানে এই মহর্ষির উল্লেখ পাওয়া যায়। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- আত্রেয় ও আবাস।
· গর্গঃ- গর্গ ঋষি ছিলেন একজন জ্যোতির্বিদ ও যাদববংশের কুলগুরু। তার পুত্রী ছিলেন গার্গীসংহিতার রচয়িতা। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- গার্গ্য, মান্ডব্য ও কৌস্তভ।
· গৌতমঃ- গোতম ঋষির পুত্র ছিলেন ঋষি গৌতম। তিনি গৌতমসংহিতা রচনা করেছিলেন। রামায়নে আমরা গৌতম ঋষি ও অহল্যার কাহিনী পড়েছি। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- আঙ্গিরস, বার্হস্পত্য, অপ্সার ও নৈধ্রুব।
· ঘৃতকৌশিকঃ- ঋষি ঘৃতকৌশিক ছিলেন কৌশিক ঋষির পুত্র। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- কুশিক ও কৌশিক।
· চান্দ্রায়ণঃ-
· জাতুকর্ণঃ- জাতুকর্ণ ঋষি ছিলেন ঋষি আত্রেয় এর প্রধান শিষ্য। তিনি একটি দুস্প্রাপ্য আয়ুর্বেদ শাস্ত্র রচনা করেছিলেন। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- বশিষ্ঠ ও অত্রি।
· জামদগ্ন্যঃ- ঋষি জামদগ্ন্য ছিলেন ভগবান পরশুরামের ভ্রাতা। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- জমদগ্ন্যি, বশিষ্ঠ ও ঔর্ব্ব।
· ধনন্বন্তরি / ধন্বন্তরীঃ- সমুদ্র মন্থনের সময় এই ঋষির উৎপত্তি হয়। ঋষি ধন্বন্তরী ছিলেন একজন সুচিকিৎসক। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- গৌতম, অপসার, আঙ্গিরস, বার্হস্পত্য ও নৈধ্রুব।
· নাগঋষিঃ-
· পরাশরঃ- ঋষি পরাশর ছিলেন বশিষ্ঠ মুনির পৌত্র। তিনি ঋষি পুল্যস্তের কাছে বিষুপুরান শ্রবন করে ও মুনি মৈত্রেয় কাছে তা বর্ণনা করতেন। ঋষি পরাশর পুত্র ছিলেন মহাভারত রচয়িতা বেদব্যাস। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- বশিষ্ঠ ও শান্ত্রি।
· বশিষ্টঃ-
· বাঘ্র ঋষিঃ-
· বাৎস্যঃ- বাৎস্য ঋষি ছিলেন ভৃগুবংশীয় হরির পুত্র ও সাবর্নী মুনির ভ্রাতা। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- ঔর্ব্ব, চ্যবন, ভার্গব, জামদগ্ন্য ও আপ্লুবৎ।
· বিষ্ণুঃ- বিষ্ণু ঋষির বংশধররাই এই গোত্রের অধিকারি। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- বুদ্ধি ও কৌরব।
· বিশ্বামিত্রঃ-
· বৃদ্ধিঃ- ঋষি বৃদ্ধির পরবর্তী বংশধরদের বলা হয় বৃদ্ধি গোত্র। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- কুরু, আঙ্গিরস ও বার্হস্পত্য।
· বৃহস্পতিঃ- দেবগুরু বৃহস্পতির বংশধরদের বলা হয় বৃহস্পতি গোত্র। ঋষি বৃহস্পতি ছিলেন ব্রহ্মা ও অঙ্গিরা পুত্র। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- কপিল ও পর্ব্বন।
· ভরদ্বাজঃ- দেবগুরু বৃহস্পতির পুত্র ঋষি ভরদ্বাজ। কথিত আছে হিমালয় দর্শনে গিয়ে অপ্সরা ঘৃতাচীর প্রেমে পরেন। তার পুত্র ছিলেন রথী আচার্য্য দ্রোণ।এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- আঙ্গিরস ও বার্হ্যস্পত্য।
· ভার্গবঃ-
· মৌদগল্যঃ- চন্দ্রবংশীয় হর্য্যাশ্বের পুত্র মুদগল থেকে তার উৎপত্তি। গুরু কৃপাচার্য ছিলেন এই গোত্রের। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- ঔর্ব্ব, চ্যবন, ভার্গব, জামদগ্ন্য ও আপ্লুবৎ।
· শক্তিঃ- ঋষি ছিলেন অঙ্গীরা বংশীয় একজন মহান ঋষি। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- বশিষ্ঠ ও পরাশর।
· শিবঃ- ভগবান শিবের কন্ঠ হতে সৃষ্ট শিব ঋষি। নাথ ও দেবনাথ যোগিদের বলা হয় শিব গোত্র। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- শম্ভু, সরোজ, ভূধর ও আপ্লবৎ।
· শান্ডিল্যঃ- ঋষি শান্ডিল্য ছিলেন ব্রহ্মাপুত্র প্রচেতার পৌত্র। শান্ডিল্য ঋষিই ভক্তি সূত্রের প্রনেতা তাই তাকে ভক্তিমার্গের পথ প্রদর্শক বলা হয়। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- আসিত ও দেবল।
· শুনকঃ- শুনক ঋষি ছিলেন মুনি ঔর্ব্বের পৌত্র। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- শৌনক ও গৃৎসমদ।
· সাবর্ণঃ- সাবর্ণ ঋষি ছিলেন ভৃগুবংশীয় হরির পুত্র, নৈমিষ্যারণ্য নিবাসী এক মহাতপস্বী। তারই পর্থনায় বায়ুদেব পুরানকথা কীর্তন করতেন। এই গোত্রের অন্যান্ন প্রবর ঋষিরা হলো- ঔর্ব্ব, চ্যবন, ভার্গব, জামদগ্ন্য ও আপ্লুবৎ।
· হোবি ঋষিঃ-
মূল লেখাঃ https://bappy-sharkar.blogspot.com/2021/07/blog-post_5.html
বিঃদ্রঃ তথ্যগুলো সংগ্রহীত তাই কোন ভুল থাকলে আমাকে জানাবেন সংশোধন করে দিবো।
মনুর ১ । ১০৬ ৷ সম্পূর্ন শ্লোকটি হলো “ইদং স্বস্ত্যয়নং শ্রেষ্ঠমিদং বুদ্ধিবিবর্দ্ধনং। ইদং যশস্যমায়ুষ্যমিদং নিঃশ্রেয়সৎপরং” ॥ যার বাংলা অর্থ অনেকটা “এই শাস্ত্র অধ্যয়নই স্বস্ত্যয়ন অর্থাৎ অভীষ্ট সিদ্ধিদায়ক এবং শ্রেষ্ঠ এই শাস্ত্রাভ্যাসে বুদ্ধি বৃদ্ধি হওত আয়ুঃযশ এবং মোক্ষ লাভ হয়”।
উক্ত প্রতিজ্ঞ যুক্তি সিদ্ধ মনুষ্য মাত্রকে এবং পশ্বাদিকে ব্যবহার করিতে হইতেছে এবং যে ব্যবহার করতেছে ফল প্রাপ্ত অদ্যাপি হইতেছে এবং চিরকাল হইবেক, অত্র সন্দেহ মাত্র নাই ৷
আলোচনা প্রসঙ্গ থেকে পাওয়া যায়, ১৩৫৫ বাংলা সনের ৩২শে আষাঢ়, শুক্রবার, কথা পসঙ্গে উমাশঙ্কর চরন দা শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রশ্ন করেছিলেন, “স্বস্ত্যয়নী জিনিসটা কী? ইষ্টভৃতি তো আছে।“
প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর উত্তরে বলছেন, স্বস্ত্যয়নী একটা ব্রতবিশেষ। পাঁচটি নীতি নিয়ে স্বস্ত্যয়নী। এতে ক্রমোন্নতির অন্তরায়গুলি যেমন নিরুদ্ধ হয়, তেমনি উন্নতিলাভের পক্ষে অপরিহার্য্য গুণগুলি আয়ত্ত হয়, যাতে ক’রে সর্ব্ববিধ অমঙ্গল দূরীভূত হ’য়ে মঙ্গলের পথ প্রশস্ত হয়। তাছাড়া, এতে গ্রহবিপাক খণ্ডে। গ্রহ মানে that which makes one'S intellect obsessed ( যা' মানুষের বুদ্ধিকে অভিভুত করে)। যেমন শনিগ্রহ, রাহুগ্রহ। কর্ম্মফলে গ্রহ কুপিত হলে যে-সব শান্তি- স্বস্ত্যয়ন করে, তার থেকে ঢের ফল হয় স্বস্ত্যয়নী নীতিগুলি নিখুঁতভাবে পালন করায়। এ ব্রতের মূল কথা হ’লো যুগপৎ এই পাঁচটি নীতি পালন করতে হবেঃ-
(১) শরীরকে ইষ্টপুজার যন্ত্র বিবেচনা ক’রে সুস্থ ও সহনপটু ক’রে তুলতে হবে।
(২) মনের কোণে যখনই যে-কোন প্রবৃত্তি উকি মারুক না কেনো, তাকে ইষ্টস্বার্থ ও ইষ্টপ্রতিষ্ঠার অনুকূলে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।
(৩) যে- কাজে যখনই যা' ভাল ব’লে মনে হবে, তা' কাজে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
(৪) পারিপার্শ্বিকের বাঁচা-বাড়াকে নিজেরই বাঁচা-বাড়ার স্বার্থজ্ঞানে তাদের যাজনসেবায় ইষ্টে আকৃষ্ট ও যুক্ত ক’রে উন্নত-চলৎশীল করে তুলতে হবে।
(৫) আর, চাই নিজের কর্ম্মশক্তি, উদ্ভাবনীবুদ্ধি ও অর্জ্জনপটুতাকে বাড়িয়ে তুলে নিত্য বিধিমাফিক অর্ঘ্য-নিবেদন। এই সবগুলি আচরণ করলে তবেই স্বস্ত্যয়নী পালন করা হলো।
সূর্য্যের যেমন রোজই সংক্রমণ হচ্ছে। একটা range (এলাকা) থেকে যখন অন্য range-এ ( এলাকায়) যায়, তখন তাকে বলে সংক্রন্তি। স্বস্ত্যয়নী ব্রত নিষ্ঠাসহকারে প্রতিটি নীতিবিধিসহ পালন করতে থাকলে আমাদেরও তেমনি সূর্য্যের সাথে-সাথে নিত্য সেই ব্রতনুযায়ী জীবন-চলনার ক্ষেত্রে ধীরে-ধীরে এক নতুন জগতে সংক্রমণ অর্থাৎ অনুপ্রবেশ সংঘটিত হ’তে থাকে। এই ইষ্টাভিমুখী সংক্রমণের ফলে প্রবৃত্তি-অভিভূতির নাগপাশ থেকে আমরা ধীরে ধীরে মুক্তিলাভ করতে পারি, তখন গ্রহ বা গেরো বা complex -এর (প্রবৃত্তির) knot (গ্রন্থি) আমাদের কাবেজ করতে পারে কমই।
স্বস্ত্যয়নী যেহেতু একটা ব্রতবিশেষ। পাঁচটি নীতি নিয়েই শ্রীশ্রীঠাকুর প্রবর্তিত এই স্বস্ত্যয়নী। আলোচনা প্রসঙ্গে থেকে বুঝতে পারি এই ব্রত পালন করলে ক্রমোন্নতির-অন্তরায়গুলি যেমন নিরুদ্ধ হয়, তেমনি উন্নতি লাভের পক্ষে অপরিহার্য্য গুণগুলি আয়ত্ত হয়, যাতে করে সৰ্ব্ববিধ অমঙ্গল দূরীভূত হয়ে মঙ্গলের পথ প্রশস্ত হয় মানুষের। তাছাড়া, এতে গ্রহবিপাকও খণ্ডে বা কেটে যায়। এখানে গ্রহ মানে যা মানুষের বুদ্ধিকে অভিভূত করে রাখে। আমাদের কর্ম্মফলের কারনে গ্রহ কুপিত হলে যে-সব শান্তি-স্বস্ত্যয়ন করা হয়, তার থেকে ঢের বেশী ফল হয় স্বস্ত্যয়নীর নীতিগুলি নিখুঁত ভাবে পালন করায়। শ্রীশ্রীঠাকুর-এর সকল দীক্ষিতদের ‘ইষ্টভৃতি’ দীক্ষা নিলেই করতে হয় দীক্ষাকে চেতন রাখবার জন্য, জীয়ন্ত রাখবার জন্য। আমরা জানি যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি অস্তিত্বকে ধরে রাখে কিন্তু আরোতর বর্দ্ধনার জন্য স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহণ ও পালন করে চলতেই হবে।
এই স্বস্ত্যয়নী কথাটা এসেছে ‘স্বস্ত্যয়ন’ কথা থেকে যার মানে – “সু+অস্তি+অয়ন”- অর্থাৎ প্রকৃষ্টভাবে বেঁচে থাকার পথ। মানব জীবনের চরম ও পরম সম্ভাব্যতাকে বাস্তবে ফুটিয়ে তোলাই হলো জীবনের সাধনা। তার জন্য আমাদের চাই দেহ, মন, ইচ্ছাশক্তি ও পারিপার্শ্বিকের ইষ্টানুকূল নিয়ন্ত্রণ, সামঞ্জস্য ও সমাধান ৷ তারই অপূর্ব্ব সঙ্কেত আছে স্বস্ত্যয়নীর পাঁচটি নীতির মধ্যে। স্বস্ত্যয়নী ব্রত পালন করা মানেই হলো ঐ পাঁচটি নীতিরই নিখুঁত অনুশীলন ও অনুসরণ করা।
সাধারণত অনেকেই মনেকরেন, স্বস্ত্যয়নী মানেই হচ্ছে নিরামিষ আহার, যারা স্বস্ত্যয়নী নেয়নি তাদের হাতে ভাত না খাওয়া, তিন টাকা ইষ্টার্ঘ্য হিসাবে পাঠিয়ে বাকি টাকা নিজের কাছে গচ্ছিত রাখা ইত্যাদি। আসলেই কি তাই? সনাতন ধর্মের মানুষ হাজার বছর ধরে তিন ধরনের খাবার গ্রহন করে আসছে, ক) সাত্ত্বিক আহার খ) রাজসিক আহার গ) তামসিক আহার। সংক্ষেপে এই বিষয়ে একটু বলি……
ক) সাত্ত্বিক খাবার হল, এমন সকল খাদ্য যা খাদ্যের উপর ভিত্তি করে তিনটি যোগিক গুণাবলীর মধ্যে গুণ ধারণ করে যা ‘সত্ত্ব’ নামে পরিচিত। প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় যুগের সাহিত্যে থেকে দেখা যায় ধারণাটি মিতাহার, যার আক্ষরিক অর্থ হলো “খাওয়ার মধ্যপন্থা”। তাছাড়া সাত্ত্বিক খাদ্য হল আয়ুর্বেদিক সাহিত্যে প্রস্তাবিত এক ধরনের চিকিৎসা। সাত্ত্বিক শব্দটি সত্ত্ব থেকে উদ্ভূত যা একটি সংস্কৃত শব্দ। সত্ত্ব হল ভারতীয় দর্শনের একটি জটিল ধারণা, যা অনেক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়ছে এবং এর অর্থ হল "বিশুদ্ধ, সারাংশ, প্রকৃতি, অত্যাবশ্যক, শক্তি, পরিষ্কার, সচেতন, শক্তিশালী, সাহস, সত্য, সৎ, জ্ঞানী, জীবনের মৌলিকতা" ইত্যাদি। এইভাবে সাত্ত্বিক খাদ্যের অর্থ হল খাদ্য ও খাওয়ার অভ্যাসকে অন্তর্ভুক্ত করা যা "বিশুদ্ধ, অপরিহার্য, প্রাকৃতিক, অত্যাবশ্যক, শক্তি প্রদানকারী, পরিষ্কার, সচেতন, সত্য, সৎ, জ্ঞানী"।
খ) রাজসিক বা রাজস খাদ্যকে মশলাদার, গরম, ভাজা বা অম্লীয় খাবার হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে। এই ধরনের খাবার দুঃখ বা অসুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। জাঙ্ক ফুড বা সংরক্ষিত খাবারকে প্রায়ই রাজসিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
গ) তামসিক খাবার বা স্ট্যাটিক ফুডও বলা হয়, এমন খাবার যা যোগব্যায়াম অনুসারে খাওয়া মন ও শরীর উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। মনের ক্ষতির মধ্যে এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত যা একটি নিস্তেজ, কম পরিমার্জিত চেতনার অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে। শারীরিক ক্ষতির মধ্যে এমন কোনো খাবার অন্তর্ভুক্ত যা কোনো শারীরিক অঙ্গের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিকর চাপ সৃষ্টি করবে।
এবার একটু জৈন নিরামিষবাদ জেনে নেই আমরা, জৈন সংস্কৃতি এবং দর্শনের অনুগামীরা অনুসরণ করে গঠিত। এটি হলো ভারতীয় উপমহাদেশ এবং তার বাইরে আধ্যাত্মিকভাবে অনুপ্রাণিত খাদ্যতালিকার সবচেয়ে কঠোর রূপগুলির মধ্যে একটি নীতি। জৈন ধর্মের রন্ধনপ্রণালী সম্পূর্ণরূপে ল্যাকটো বা নিরামিষ ভোজন। আমরা অনেকেই হয়তো যানি না, জৈনরা ছোট পোকামাকড় এবং অণুজীবের ক্ষতি আটকাতে এবং পুরো গাছটিকে উপড়ে ফেলাতে গাছটির মারা যাওয়ার সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করতেই তারা মূল এবং ভূগর্ভস্থ সবজি যেমন- আলু, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি খাবার খায় না।
এই নিয়ম জৈন তপস্বী এবং সাধারণ জৈনরা মেনে চলছে হাজার বছর ধরে। অহিংসা নীতির উপর ভিত্তি করেই সাধারনত মাংস, মাছ এবং ডিম খাওয়ার নিষেধগুলি তৈরি। জৈন-রা মনে করেন, প্রত্যেকটি কাজ যার দ্বারা কোন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যা বা আঘাতকে সমর্থন করে তাকে সহিংসতার কাজ হিসাবে দেখা হয় যা ক্ষতিকর কর্মফল সৃষ্টি করে থাকে। অহিংসার মূল উদ্দেশ্যই হল এই ধরনের কর্মের সঞ্চয় রোধ করা। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই সদিচ্ছার কার্যকরিতা ব্যাপকভাবে আলাদা মত রয়েছে।
নিয়ম অনুসারে লেখা শেষ করতে হবে, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র লোক কল্যানে মনু সংহিতার উক্ত মন্ত্রকে নবীকরণ করতে প্রবর্তন করলে স্বস্ত্যয়নী ব্রতবিধির । যদিও স্বস্ত্যয়নীর প্রবর্তন করেছিলেন প্রথমে ১৯৩৭ খ্রীষ্টাব্দে আর ১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দে ইষ্টভৃতি।
পঞ্চনীতি সমন্বিত এই স্বস্ত্যয়নী ব্রতের প্রবর্তন করেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর, বাণী আকারে বলেছেন……
১. শ্রীবিগ্রহের মন্দির ভেবে
যত্ন করিস শরীরটাকে,
সহনপটু সুস্থ রাখিস
বিধি মাফিক পালিস তাকে;
২. প্রবৃত্তি তোর যখন যেমন
যেভাবেই উঁকি মারুক,
ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠাতে ঘুরিয়ে দিবি
তা’র সে ঝোঁক;
৩. যে-কাজে যা’ ভাল ব’লে
আসবে মনে তৎক্ষনাৎ
হাতে-কলমে করবি রে তা’
রোধ করে তা’র সব ব্যাঘাত;
৪. পাড়াপড়শীর বাঁচা-বাড়ায়
রাখিস রে তুই স্বার্থটান,
তাদের ভালয় চেতিয়ে তুলিস
ইষ্টানুগ ক’রে প্রাণ;
৫. নিজের সেবার আগে রোজই
শক্তি মত যেমন পারিস,
ইষ্ট অর্ঘ্য ভক্তিভরে
শুচিতে নিবেদন করিস;
এই নিয়মে নিত্যদিন
প্রতি কাজেই সর্ব্বক্ষণ
স্বস্ত্যয়নীর নিয়মগুলি
পালিস দিয়ে অটুট মন;
ত্রিশটি দিন পুরে গেলে
মাসিক অর্ঘ্য সদক্ষিণায়
ইষ্টভোজ্য পাঠিয়ে বাকি
মজুত রাখবি বর্দ্ধনায়;
চিরজীবন এমনি ক’রে
ইষ্টস্থানে হয় নিরত,
তা’কেই বলে স্বস্ত্যয়নী
সবার সেরা মহান ব্রত।
~ জয়গুরু সকলকে ~
মূল লেখাঃ https://bappy-sharkar.blogspot.com/2024/05/blog-post_22.html
সনাতন ধর্ম বা মতানুসারে অনেক পূজা-পার্বণ, ব্রত, উপবাস, নানান বর্ণ-গোত্রের বিভিন্ন নিয়ম কানুন দেখা যায়। বেদ ও বিভিন্ন পুরাণে ভিন্ন ভিন্ন ব্রতাদির কথা নানা ভাবে উল্যেক্ষ পাওয়া যায়। আজ আমি তেমনি একটি ব্রত নিয়ে আমার অভিমত ও অভিজ্ঞতা জানাবো, এখানে যে কোন ভুল বা সংশোধনের বিষয় যদি আপনার চখে আসে তবে আমাকে নির্বিধায় জানাবেন এতে আমি নিজিকে ধন্য মনে করে আরো সমৃদ্ধ করে নিবো। লেখার মূল তথ্যগুলো সৎসঙ্গ-র ঋষি পুরুষ পূজ্যপাদ শ্রীবিদ্যুৎরঞ্জন চক্রবর্ত্তী দাদার সংকলিত “প্রার্থনা” গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।
মূল লেখা শুরু করার পূর্বে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলতেই হয়, আমরা কেন ব্রত করবো? অন্ন-জল না খেয়ে, বিভিন্ন নিয়ন কানুনের ভিতর দিয়ে নিজের শরীর ও মনকে কষ্ট দিয়ে কিইবা লাভ! ‘ব্রত’ কথাটির তাৎপর্যই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বা উন্নত কিছুকে বরণ করে তৎকর্ম্মনিষ্ঠ হওয়া এবং তার বিরোধী যা কিছু আছে তাকে অবরোধ করা। অপরদিকে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হচ্ছে বৃত্তির যে-সাড়ায় মানুষের ভিতর অপকর্ম্মের সৃষ্টি হয়, নিয়মিত মনন ও আচরণে তাতে অধিগমন করে, তা আবিষ্কার করে তাকে এমনতরভাবে নিঃশেষ করা যাতে তা আর কোনক্রমেই নিজের চরিত্রের ভিতর চারিয়ে ঐ অপকর্ম্মের সৃষ্টি না করতে পারে।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলছেন, মানুষ যখন কদাচারদোষদুষ্ট হয় তখন তার সূক্ষ্ম সাড়াপ্রবণতা হারিয়ে ফেলে। প্রায়শ্চিত্ত মানেই হলো ব্রতপালন দ্বারা পুনরায় চিৎত্বে গমন করা বা নষ্ট সাড়াপ্রবণতাকে আবার নিজের জীননে ফিরিয়ে আনা। শাস্ত্র মতে প্রায়শ্চিত্তের কয়টা অধ্যায় আছে, (ক) খ্যাপন (খ) মার্জন (গ) স্খালন (ঘ) অঘমর্ষণ (ঙ) ঐকান্তিকতার সহিত শ্রেয়ানুশীলন।
ক) খ্যাপন বলতে, নিজের পাপের কথা উপযুক্ত যে কোন দরদী ব্যক্তিত্বের কাছে খুলে বলতে হবে।
খ) মার্জন বলতে, নিজেকে মেজে/পরিষ্কার করে নিতে হবে।
গ) স্খালন বলতে, নিজে নিজে ময়লাবিমুক্ত হওয়া বা Devoid of Dirties।
ঘ) অঘমর্ষণ বলতে, পাপের চিন্তা একেবারে নাশ করে ফেলা বা পাপে একদম নির্লোভ হওয়া, আসক্তিবিহীন হওয়া।
আমরা যে-কোন রকম প্রায়শ্চিত্তই করি না কেন এই কয়টা নিয়মের মধ্য-দিয়েই যেতেই হবে। এইভাবে ক্রমে ক্রমে নির্লোভ হয়ে আমাদের পাপের প্রতি আসক্তিবিহীন হতেই হবে।সর্বশেষে প্রয়োজন ঙ) ঐকান্তিকতার সহিত শ্রেয়ানুশীলন। এই ধাপগুলি ধারাবাহিক ভাবে পালন ও অতিক্রম করতে পারলেই আমাদের প্রায়শ্চিত্ত করা সম্পূর্ণ হবে।
মনে রাখতে হবে ব্রতাচরণ বা প্রায়শ্চিত্ত কোন শাস্তি বিশেষ নয়। এটি একটি আত্মিক শক্তির বৃদ্ধি ও পাপক্ষয়ের এক মনোবিজ্ঞান ও দেহবিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়া। মানুষ ঠিক ঠিক প্রায়শ্চিত্ত তখনই করে, যখন সে আর পূর্ব্ব পাপের পুনরাবৃত্তি করে না। আত্মশক্তির উদ্বোধন ও বিকাশের জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরের বিধিনির্দিষ্ট ব্রত ও প্রায়শ্চিত্তাদি প্রয়োজনানুসারে আমাদের অবশ্যই পালনীয়।
যে কোন ব্রত শুরু করার আগের দিন নিষ্ঠার সাথে ব্রতধারীকে সংযমে থাকতে হয়। সংযমটা হলো একরকম ব্রতের প্রস্তুতি-পর্ব্ব। সংযমের দিন সৎসঙ্গীদের সকালে নিত্য করণীয় জপ-ধ্যান, ইষ্টভৃতি, স্বস্ত্যয়নী, প্রার্থনা ইত্যাদি করার পর শুচিশুদ্ধ অন্তঃকরণে শ্রীশ্রীঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণামী ও ভোজ্যাদি নিবেদন করতে হবে। তারপর পূর্ব্বাহ্নে হবিষ্যান্ন অর্থাৎ প্রথমে আতপচালে ডাল বাটা, কাঁচাকলা দিয়ে ফেনশুদ্ধ ভাত ঘি ও সৈন্ধব লবণসহ, পরে দুধ-কলা-গুড়সহ খেয়ে সারাদিন আর কিছু না খেয়ে সংযম পালন করতে হবে। তেমন প্রয়োজন হলে বা অশক্ত হলে রাত্রে একটু দুধ খাওয়া যেতে পারে। এইভাবে সারাদিন থেকে পরের দিন থেকে সঙ্কল্পিত ব্রত আরম্ভ করতে হবে। সংযমের প্রধান জিনিষ হল নিজের মনটাকে ইষ্টঝোঁকা করে তোলা ও নিজেকে নামময় করে তোলা।
বার দিনের “প্রাজাপত্য-ব্রত” এর কথা বেদে উল্যেক্ষ আছে, বিভিন্ন কারনে আমাদের এই ব্রত পালন করতে হয়। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র “শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত” করতে বলেছেন আমাদের। শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত চারদিন ধরে করতে হয়। প্রথম দিন পূর্ব্বাহ্নে হবিষ্যান্ন, দ্বিতীয় দিন অপরাহ্নে হবিষ্যান্ন, তৃতীয় দিন অযাচিত- হবিষ্যান্ন অর্থাৎ না চাইতেই যদি কেউ হবিষ্যান্নে গ্রহণযোগ্য ভোজ্য দেয় তা' দিয়ে হবিষ্যান্ন এবং চতুর্থ দিন নিরম্বু উপবাস থেকে পঞ্চম দিন প্রাতে যথাসাধ্য ইষ্টপ্রণামী নিবেদন করে ব্রত উদযাপন করতে হবে।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশনের ঋত্বিক সম্মেলনে পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্ত্তী-দাদা শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত বিষয়ক নানান আলোচনা করলেন এবং সকল কর্মীদের নির্দেশ দিলেন বৎসরে একবার এই ব্রত করতে হবে। অনেক কর্মীই তখন মনে মনে এই ব্রত করার সিদ্ধান্ত নেয় তাদের মধ্যে আমিও একজন। কিন্তু সমস্যা হলো ৫-৬ দিন ছুটি নিয়ে মন্দিরে থেকে এই ব্রত করতে হবে। কি করা যায় ভাবতে ছিলাম……….
আমি ও নারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক) গেন্ডারিয়া, ঢাকা থেকে প্রথম শিশু প্রাজাপত্য ব্রত করার সিন্ধান্ত নিলাম। নিয়মানুসারে আমাদের ঋত্বিক সচিব শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্র চক্রবর্তী (সহ-প্রতি ঋত্বিক) দাদার তত্বাবধানে এই ব্রত সম্পূর্ণ করতে হবে। তাই করা হলো, শ্রদ্ধেয় ঋত্বিক সচিব মহোদয় একটি তালিকা করে দিলেন কখন কি কি নিয়ম পালন করতে হবে আমাদের। আমরা সিন্ধান্ত নিলাম ঈদ-উল-আযহা এর বন্ধে গেন্ডারিয়া থেকে আমরা ব্রত করবো।
এখন কে কে করবে তার খোজ করতে শুরু করলাম আমরা। তখন কেরাণীগঞ্জে আমাদের মন্দিরের দ্বিতীয় তলা সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই ব্রত দ্বিতীয় তলাতেই শুরু করলাম আমরা। তারিখ ঠিক করলাম ঈদ-উল-আযহার পরদিন থেকে শুরু হবে তাই ঈদের দিন আমরা সবাই একত্রে মন্দিরে থাকবো। ১১ই জুলাই ২০২২ ইং থেকে ১৪ই জুলাই ২০২২ ইং আমাদের শিশু প্রাজাপত্য ব্রত চললো।
যারা যারা করেছিলাম ……….
শ্রীনারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীপিযুষ কান্তি দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিমল দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীস্বপন কুমার বিশ্বাস (অধ্বর্য্যু), নরসিংদি
শ্রীরাম কৃষ্ণ সরকার (যাজক) আমি
ত্রিসন্ধ্যা স্নান করতে হবে, স্নানের সময় সাবান, শ্যাম্পু ও তেল ব্যবহার করা যাবে না, তোষক-বালিসে শ্বয়ন করা যাবে না, মা ব্যাতিত কোন নারীর মুখ দর্শন-কথা বলা নিষিদ্ধ ইত্যাদি।
আমাদের যা যা করতে হতো ……
প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহূর্তে নিদ্রাত্যাগ করার পর থেকে। (সময় কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে, এখানে উদাহরন স্বরুপ দেওয়া হল)
নাম ধ্যান ৪.০০ মিনিট পর্যন্ত
শয্যাত্যাগ ভোর ৪.০০ মিনিট
প্রাকৃতিক কাজ ৪.০১-৪.৩০ মিনিট
নামজপ ও ইষ্টভৃতি ৪.৩১-৪.৫৩ মিনিট
প্রার্থনা ভোর ৪.৫৪-৫.২৪ মিনিট
স্বাধ্যয় ভোর ৫.২৫-৭.০০ মিনিট
শব ধ্যান সকাল ৭.০১-৭.০৫ মিনিট
মৌনব্রত সকাল ৭.০৬-৭.৩০ মিনিট
ইষ্টালোচনা ৭.৩১-৮.০০ মিনিট
ধ্যান সকাল ৮.০১-৮.৪৫ মিনিট
স্বাধ্যয় সকাল ৮.৪৬-৯.৩০ মিনিট
মৌনব্রত ৯.৩১-১০.০০ মিনিট
নামধ্যান ১০.০১-১০.৪৫ মিনিট
স্বাধ্যয় ১০.৪৬-১১.৩০ মিনিট
ইষ্টালোচনা সকাল ১১.৩১- দুপুর ১২.১৫ মিনিট
নাম-ধ্যান দুপুর ১২.১৬-১.০০ মিনিট
মৌনব্রত দুপুর ১.০১-২.৩০ মিনিট
ইষ্টালোচনা বিকেল ২.৩১ -৪.০০ মিনিট
স্বাধ্যয় বিকেল ৪.০১-৫.০০ মিনিট
শবধ্যান বিকেল ৫.০১-৫.০৬ মিনিট
নাম-ধ্যান বিকেল ৫.০৬ -৫.৫০ মিনিট
মৌনব্রত বিকেল ৫.৫১-৬১৫ মিনিট
প্রার্থনার প্রস্তুতি গ্রহণ বিকেল ৬.১৫-৬.৫০ মিনিট
সান্ধ্যকালীন প্রার্থনা সন্ধ্যা ৬.৫১-৭.২০ মিনিট
ইষ্টালোচনা সন্ধ্যা ৭.২১-৭.৫০ মিনিট
নাম-ধ্যান রাত ৭.৫১-৮.৩৫ মিনিট
স্বাধ্যয় রাত ৮.৩৬-৯.০০ মিনিট
শবধ্যান রাত ৯.০১-৯.০৬ মিনিট
ইষ্টালোচনা রাত ৯.০৬-৯.৩০ মিনিট
নাম-ধ্যান রাত ৯.৩১-১০.১৫ মিনিট
শয্যাগ্রহণ ১০.১৬ মিনিট
নিদ্রা ব্রাহ্মমুহূর্ত পর্যন্ত
১৫ ই জুলাই সকালে প্রার্থনা শেষ করে জল গ্রহনের মাধ্যামে শেষ হয় আমাদের ১ম শিশু প্রাজাপ্রত্য ব্রত।
***************************
সময় ঘুরে আবার ২০২৩ এর ঈদ-উল-আযহা চলে এলো আমাদের দ্বিতীয় শিশু প্রাজাপ্রত করার দিন। ঈদ এর বন্ধে গেন্ডারিয়া থেকে আমরা, ৩০শে জুন ২০২৩ ইং থেকে ০৩রা জুলাই ২০২৩ ইং আমাদের ব্রত করলাম। তৃতীয় তলায় আলাদা আলাদা কক্ষে।
যারা যারা করেছিলাম ……….
শ্রীনারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীপিযুষ কান্তি দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিমল দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীরাম কৃষ্ণ সরকার (অধ্বর্য্যু) আমি
শ্রীনারায়ন চক্রবর্ত্তী (স্বস্তয়নী)
শ্রীবলরাম সরকার
শ্রীসৌরভ পোদ্দার পাপ্পু
আরো কয়েকজন গুরুভাই আমাদের কয়েকদিন আগে ও পরে শিশু প্রাজাপত্য ব্রত শুরু করেছিলেন।
******************
আমার তৃতীয় শিশু প্রাজাপত্য ব্রত সম্পন্য করি, ১৮শে জুন ২০২৪ ইং থেকে ২১শে জুন ২০২৪ ইং ৩য় তালায় আলাদা আলাদা কক্ষে, একই ভাবে ঈদ-উল-আযহা এর বন্ধে
যারা যারা করেছিলাম ……….
শ্রীনারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিমল দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিনন্দ সাহা রায় (সহ-প্রতি ঋত্বিক), নেত্রকোনা
শ্রীরাজিব কর্মকার (অধ্বর্য্যু), কক্সবাজার
শ্রীরাম কৃষ্ণ সরকার (অধ্বর্য্যু) আমি
আরো কয়েকজন গুরুভাই আমাদের কয়েকদিন আগে ও পরে শিশু প্রাজাপত্য ব্রত শুরু করেছিলেন।
সবাই আমার জন্য আশির্বাদ করবেন আমি যেন পরমপিতার একনিষ্ঠ সেবক হয়ে উঠতে পারি।
মূল লেখাঃ https://bappy-sharkar.blogspot.com/2024/06/blog-post.html
০১। বন্দে পুরুষোত্তমম্!
০২। আর্য্যস্থান -- পিতৃস্থান
উচ্চ সবার -- পূর্য্যমান।
০৩। অমর রহুক -- আর্য্যবাদ
জাগুক উঠুক -- আর্য্যজাত।
০৪। ফুলিয়ে তোল -- দুলিয়ে তোল
তাথৈ তালে -- আর্য্য-রোল।
০৫। অন্যে বাঁচায় -- নিজে থাকে
ধর্ম্ম ব'লে -- জানিস্ তাকে।
০৬। ধর্ম্মে সবাই -- বাঁচে বাড়ে
সম্প্রদায়টা -- ধর্ম না রে।
০৭। ধর্ম্মে জীবন -- দীপ্ত রয়
ধর্ম্ম জানিস -- একই হয়।
০৮। সমান বিয়ের -- সাম্য ধাঁজ
অনুলোমে -- বাড়ায় ঝাঁজ।
০৯। পুরুষের বিয়ে -- উচ্চ ঘরে
বাড়ে আপদ -- বংশ মরে।
১০। নিম্ন বর্ণে -- নারীর রতি
এর বাড়া নেই -- ঘৃণ্য গতি।
১১। মুখে জানে -- ব্যবহারে নাই
সেই শিক্ষার -- মুখে ছাই।
১২। অভ্যাস ব্যবহার -- ভাল যত
শিক্ষাও তার -- জানিস্ তত।
১৩। শিক্ষকের নাই -- ইষ্টে টান
কে জাগাবে -- ছাত্রপ্রাণ।
১৪। শিক্ষাগুরু থাক না অনেক
শিখো যেমন পার,
ইষ্টগুরু একই কিন্তু
নিষ্ঠা সহ ধর।
১৫। ইষ্ট তোমার দাঁড়িয়ে আছেন
জীবন ভূমির পারে ওপারে,
আপন ক'রে নে তাঁরে তুই
কর্ম্ম আচার ব্যবহারে।
১৬। পয়সা নিয়ে ইষ্ট সেবা
পালন করতে পরিবার,
বোধ বিদ্যা নিকাশেই ধায়
ব্যর্থ জীবন হয়ই তার।
১৭। দেব-দেবতা হাজার ধরিস্
আচার্য্য যা'র ইষ্ট নয়,
স্পষ্টতর বুঝে রাখিস্
জীবন চলায় নেহাৎ ভয়।
১৮। ইষ্টনিষ্ঠায় ভাঙ্গন ধরায়
এমন সঙ্গই অসৎ বলে,
ঊর্জ্জী পরাক্রমে নিরোধ
ক'রবি তা'দের অবহেলে।
১৯। নিষ্ঠা-প্রীতি দ্বৈধ হ'লে
রয়না বুকে কিছু,
স্বার্থলুব্ধ হয়ই তারা
ঘোরেই তাহার পিছু।
২০। (যারা) স্বার্থ-সেবী হীন বুদ্ধি
ইষ্টনিষ্ঠ হয়না তা'রা,
অশ্রেয়কেই ভজন করে
বোধ ও কৃতি শ্রেয় হারা।
২১। নিষ্ঠা মানেই লেগে থাকা
ইষ্টসত্তায় নিরন্তর,
ভাঙ্গাচোরা হয় যেমনটি যার
জানিস্ সেজন তেমন ইতর।
২২। আচার্য্যগুরু, ইষ্ট যিনি
ত্যাজ্য ননকো তিনি কখন,--
ত্যাজ্য হ'লে হয় না সার্থক
ব্যক্তিত্বতে তার জীবন।
২৩। আচার্য্যগুরু নন্ তো ত্যাজ্য
ভরজীবনে তিনি,
সারা জীবনেই সাধতে হবে
তাঁহার নিদেশ বাণী।
২৪। বেত্তা যিনি তিনিই আচার্য্য
অন্য যা' সব বিশেষ,
বিশেষ জেনে নির্ব্বিশেষে
হয়ে থাকেন অশেষ।
২৫। আচার্য্য ছেড়ে আচার্য্য ধরলি
মূর্খতাতে দিলি পা,
জ্ঞানের বুকে মারলি ছুরি
লাভ হ'লো তোর ধৃষ্টতা।
২৬। টলায়মান যাদের নিষ্ঠা
বোধও তাদের তেমনি,
অসৎকে তারা সৎই ভাবে
সৎকে উল্টো সেমনি।
২৭। ভণ্ড-ঠগী দেখবে যেথায়
ক'রো সামাল সবায়,
কেউ যেন না ঠকে পড়ে
এদের ভাঁওতায়।
২৮। ব্যাহত যার মানসদীপ্তি
বিকৃত যা'র চলন,
ইষ্টাসনে সদ্গুরু ছাড়া
হয় কি শিষ্ট মন?
২৯। বেত্তা পুরুষ মূর্ত যিনি
ধরেন ধৃতি প্রীতি দিয়ে,
আচার্য্যত্বে উদ্ভাসিত
পুরুষোত্তম আসেন হয়ে।
৩০। সদ্গুরুই তো আচার্য্যগুরু
কৃতিতপে জানেন যিনি,
কৃতিতপী সার্থকতায়
বিভূতি ঐ কৃতি তিনি।
৩১। ইষ্টার্থটির ব্যতিক্রম যা'
যতই মহান যেমন বলুক,
ধরবি নেকো করবি নিরোধ
অসৎ-আপদ যাই আসুক।
৩২। ইষ্টপূরণ নয়কো বড়
আপোষ রফায় ভ্রষ্টগতি,
নিশ্চয় জেনো অন্ধবধির
ধরেই তারে ক্রুর নিয়তি।
৩৩। ইষ্টাদর্শে পায়ে দ'লে
যেই গোলামী ভ'জে,
জীবন পথে অনেক কাঁটা
লোভে বংশ মজে।
৩৪। সত্যিকার আদর্শ যিনি
সদ্গুরুও তিনি,
বেফাঁস লোকে বিভেদ দেখে
বাস্তবে না চিনি।
৩৫। নিষ্ঠা ভাঙ্গা ঋত্বিক হ'লে
দীক্ষা তাহার ব্যর্থ,
প্রবৃত্তিই তাদের স্বার্থ হ'য়ে
খুঁজে বেড়ায় অর্থ।
৩৬। দীক্ষা নিলে জানিস মনে
ইষ্টভৃতি করতেই হয়,
ইষ্টভৃতি বিহীন দীক্ষা
কভু কিরে চেতন রয়?
৩৭। যা' ক'রেই বেড়াস না তুই
ভাবনা কি রে তোর,
স্বস্ত্যয়নীর পাঁচটি নীতি
পালিস জীবন ভোর।
৩৮। অঘমর্যী যজ্ঞ ক'রে
পাতিত্য সব পুড়িয়ে দে,
সপ্তার্চ্চিকে বরণ ক'রে
পঞ্চবর্হির স্মরণ নে।
৩৯। করেছ কি হবেই বা কি
যা' করেছ, হয়েছ,
সুখ-সুবিধা অসুখ-বিসুখ
তেমনতরই পেয়েছ।
৪০। গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে
ভাবছ মনে সবই হ'ল,
তা' নয় কিন্তু তা' তো নয়ই
নিষ্ঠা সহ যদি না পাল।
৪১। শঙ্খচক্রী -- আজও নারায়ণ
ধর্মস্থাপনে -- জনম লন।
বন্দে আর্য্যপিতৃন্! বন্দে মাতৃবর্গান্!
বন্দেহহং কৃষ্টিদৈবতান্!
পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রজী কি জয়!
বন্দে পুরুষোত্তমম্!
মূল লেখাঃ https://bappy-sharkar.blogspot.com/2024/08/blog-post.html
wait for satsang